বর্তমান প্রজন্মের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হলো ভিডিও গেম। পড়াশোনা বা কাজের চাপের পর মানসিক বিশ্রামের জন্য গেম খেলা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যখন এই খেলা অতিরিক্ত হয়ে যায় এবং জীবনের অন্য দিকগুলোতে প্রভাব ফেলে, তখন সেটিই হয়ে দাঁড়ায় গেম আসক্তি।এই পোস্টে আমরা জানব গেম আসক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো বিস্তারিতভাবে।
আরও বিস্তরিত: How to Overcome Gaming Addiction: সুস্থ জীবন ফিরে পেতে ১০টি কার্যকর পদক্ষেপ
১. মানসিক ও আবেগগত ক্ষতি
- একাগ্রতা কমে যায়: দীর্ঘ সময় গেম খেললে পড়াশোনা, কাজ বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়।
- বিরক্তি ও রাগ: গেমে হেরে গেলে রাগ, হতাশা বা সহিংস আচরণ দেখা দিতে পারে।
- ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ: বাস্তব জীবনের ব্যর্থতা থেকে পালিয়ে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটানোর ফলে হতাশা ও উদ্বেগ তৈরি হয়।
- আসক্তি বৃদ্ধি: মস্তিষ্কে ডোপামিনের অস্বাভাবিক নিঃসরণ হয়, যা নেশাজাতীয় দ্রব্যের মতো একধরনের নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে।
২. শারীরিক ক্ষতি
- চোখের সমস্যা: দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা ও চোখের চাপ সৃষ্টি হয়।
- মেরুদণ্ড ও ঘাড় ব্যথা: বসে থাকার ভঙ্গি ঠিক না হলে দীর্ঘমেয়াদে হাড় ও পেশির সমস্যা তৈরি হয়।
- ঘুমের ব্যাঘাত: গভীর রাতে গেম খেললে ঘুম কমে যায় বা অনিদ্রা হয়।
- স্বস্থ ও ফিটনেস হ্রাস: বেশি সময় বসে থাকার কারণে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় ও শরীর দুর্বল হয়।
৩. সামাজিক ক্ষতি
- পারিবারিক সম্পর্কে দূরত্ব: পরিবারের সাথে সময় না কাটিয়ে গেমে ডুবে থাকলে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ে।
- বন্ধু ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা: ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে বেশি সময় কাটাতে গিয়ে বাস্তব বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যাওয়া।
- যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি: সামনাসামনি কথা বলার অভ্যাস কমে যায়, ফলে সামাজিক দক্ষতা নষ্ট হয়।
৪.শিক্ষা ও কর্মজীবনে ক্ষতি
- পড়াশোনার ক্ষতি: শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় গেমে ব্যয় করায় পরীক্ষার ফল খারাপ হয়।
- সময় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা: গেমে মগ্ন থাকার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ পেছাতে থাকে।
- কর্মদক্ষতা হ্রাস: চাকরিজীবীরা কাজে মনোযোগ হারায়, উৎপাদনশীলতা কমে যায়।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষতি
- অতিরিক্ত খরচ: অনেক অনলাইন গেমে আইটেম বা স্কিন কিনতে টাকা লাগে। এতে অপ্রয়োজনীয় খরচ বেড়ে যায়।
- চুরি বা প্রতারণা: গেম খেলার নেশায় অনেকেই অবৈধ পথে টাকা জোগাড় করতে চেষ্টা করে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
৬. চরম পরিস্থিতি
দীর্ঘ সময় গেম খেলার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও বিশ্বজুড়ে রিপোর্ট হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হিংস্র আচরণ (বিশেষ করে সহিংস গেম খেলার কারণে) সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে, গেম আসক্তি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই করে না, পরিবার ও সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আরও বিস্তারিত : Gaming Addiction: কারণ, লক্ষণ, প্রভাব এবং সমাধান
